বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সুবিধা সমূহ
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অনন্য কীর্তি অর্জন করেছে । বাংলাদেশের প্রযুক্তির আঙ্গিনায় নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। বিষয়টি বাঙালি জাতির গর্ব ও আত্মমর্যাদার অংশ। এতে দেশ হয়েছে অভিজাত মহাকাশ ক্লাবের গর্বিত ও মহান সদস্য ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় প্রথম ভূ- উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন । এটিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল শুধু সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে। সেখান থেকেই নিজস্ব স্যাটেলাইট অর্জনের ভিত রচিত হয়। এ স্যাটেলাইটের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির পালে নতুন হাওয়া লাগবে । বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতসহ সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এক নজরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-
- ধরন- এটি একটি যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট।
- উৎক্ষেপণ কালঃ ১২ মে ২০১৮ রাত ২টা ১৪ মি.।
- উৎক্ষেপণের স্থান – কেনেডি স্পেস সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্র।
- নির্মাতা- থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস, ফ্রান্স ।
- লঞ্চ অপারেটর ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান – মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স, যুক্তরাষ্ট্র।
- রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা – বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড – বিসিএসসিএল ।
- কক্ষপথ- ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমা।
- অতিক্রান্ত পথ ৩৫,৮০০ কিলোমিটার ।
- ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ- বাংলাদেশ ও তার অন্তর্ভুক্ত বঙ্গোপসাগর এরিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও তার অন্তর্ভুক্ত দ্বীপসমূহ এবং ফিলিপাইন ও তার অন্তর্ভুক্ত দ্বীপ সমূহ।
- প্রধান কেন্দ্র- তালিবাবাদ,গাজীপুর।
- বিকল্প কেন্দ্র – বেতবুনিয়া, রাঙামাটি।
- ওজন – ৩.৭ টন ।
- মেয়াদকাল – ১৫ বছর।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সেবাসমূহ
- দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে।
- ক্যাবল ছাড়া ছোট্ট একটা এন্টেনা দিয়ে ‘ডিরেক্ট টু হোম’ (ডিটিএইচ) সেবার মাধ্যমে টিভি দেখা যাবে ।
- স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে ।
- দেশের পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চল ও দ্বীপেও ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে।
- দুর্গত এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু থাকবে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আগাম সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেয়া যাবে।
- প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাবে।
- দূরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গিয়েও কাঙ্ক্ষিত প্রফেসরের ক্লাস ই-লার্নিং বা ই-এডুকেশন পদ্ধতিতে ঘরে বসে লাভ করা যাবে।
- টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার প্রসার হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা সরাসরি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে না গিয়েও টেস্ট রিপোর্ট, এক্সরে-ইমেজ ইত্যাদির তথ্য ভিডিও কনফারেন্সের এর মাধ্যমে শেয়ার করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবে ।
- যে সব স্থানে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা সম্ভব নয় অথবা রেডিও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নেই, সে সব জল ও স্থলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা প্রদান করা যাবে।
- ঝড়, বন্যা বা ভূমিকম্পে টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক বা ট্রান্সমিশন টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্যাটেলাইট দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।
- · স্যাটেলাইটের VSATনেটওয়ার্ক দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ব্যাংকিং সুবিধাসমূহ
- অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হবে।
- ইত্যেমধ্যে সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সেবা গ্রহণের জন্য অগ্রসর হচ্ছে।
- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ডেডিকেটেড ব্যান্ডউইথ দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা পরিচালিত হলে সাইবার হামলার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
- এটিএম সেবাতে স্যাটেলাইট ব্যবহার হলে এটি সাইবার হামলা থেকে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। এ কারণেই ব্যাংকিং খাত স্যাটেলাইট পদ্ধতির ব্যবহার বেশি পছন্দ করবে।
- এটিএম বুথের জন্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুত, নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহার ও উন্নত ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করবে।
- বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় ৭ হাজার এটিএম বুথ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর সাথে যুক্ত হচ্ছে, যা আরও উন্নত ব্যাংকিং সেবা দিবে ।
- পর্যায়ক্রমে দেশের সকল এটিএম বুথ কোনো ধরণের ব্রড ব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা। আর এ ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে। স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ ও বিপণনের কাজটি করতে হবে উৎকর্ষতার সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। উৎক্ষেপণের পর মুহূর্ত থেকে এ স্যাটেলাইটের মেয়াদ থাকবে মাত্র ১৫ বছর। অযথা সময়ক্ষেপণ না করে স্যাটেলাইট থেকে ব্যাংকিং সুবিধাগুলো গ্রহণে অগ্রণীসহ দেশের ব্যাংকগুলোকে দ্রুততার সাথে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে ।