বঙ্গবন্ধু কর্নার : নন্দিত উদ্ভাবন
ইতিহাসের পাতায় অগ্রণীর একটি আলোকিত উদ্যোগ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সংকলিত বঙ্গবন্ধু কর্নার: নন্দিত উদ্ভাবন শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল ৩১ জুলাই ২০১৯ তারিখে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানটি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এবং রংধনু প্রকাশনা লিঃ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, একুশে পদকে ভূষিত কবি ও ঔপন্যাসিক অসীম সাহা। সভাপতিত্ব করেন সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং বঙ্গবন্ধু কর্নার এর উদ্ভাবক মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী আহকাম উল্লাহ।
বঙ্গবন্ধু কর্নারঃ নন্দিত উদ্ভাবন গ্রন্থটিকে মোট ৫টি বিভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রথমাংশে নন্দিত উদ্ভাবন সম্পর্কে দেশের বিশিষ্টজনদের এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান শুভেচ্ছা বাণী ও ভূমিকার অংশে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কথা রয়েছে। দ্বিতীয়াংশে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনপঞ্জি। তৃতীয়াংশে বঙ্গবন্ধু কর্নার নিয়ে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সমুহ। চতুর্থাংশে রয়েছে বিশিষ্ট দর্শনার্থী মুখরিত বঙ্গবন্ধু কর্নার এর আলোকচিত্র। সব শেষে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এর বঙ্গবন্ধু কর্নার ও অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন সংক্রান্ত তথ্য।
যেই মানুষটির জন্য আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেই, সেই মানুষটি হচ্ছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কর্পোরেট পরিমন্ডলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চেতনা, তার আদর্শ ও স্বপ্ন জনমানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মানসে এবং তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশের উদ্দেশ্যে মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম জাতির জনকের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্বীকৃতি স্বরূপ এই মহতি কাজটি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং দর্শনকে বুকে লালন করে এই স্বাপ্নিক ব্যাংকার অগ্রণী ব্যাংকে মৌলভীবাজার অঞ্চলে ২০১০ সালে নিজ উদ্যোগে স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কর্নার। পরে তিনি বিস্তৃত পরিসরে আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের এমডি হয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আরেকটি বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তোলেন। তবে তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠা সবচেয়ে সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু কর্নারটি হলো অগ্রণী ব্যাংকেরটি। এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রায় ৪০০টি বই, বঙ্গবন্ধুর তিনটি ছবির এ্যালবাম, তার একটি বড় ছবি এবং ১১৭ কেজি ওজনের একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। উল্লেখ্য, অগ্রণী ব্যাংকের যেসব শাখার নিজস্ব ভবন আছে, সেখানেও পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তোলা হবে।
মোহম্মদ শামস্-উল ইসলামের এই স্বপ্ন ইতোমধ্যে সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকসহ বিদেশের দুতাবাসেও এর বিস্তার ঘটছে। অনেক কর্পোরেট হাউস বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে নরসিংদীর ছয়টি উপজেলার ১ হাজার ১৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। অন্য জেলাগুলোতেও এ উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য জায়গায়ও এর বিস্তার ঘটেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম যে কাজটি করেছেন সেটা অত্যন্ত ভালো এবং উদ্ভাবনীমূলক। সত্যিই এটি একটি নন্দিত উদ্ভাবন। আশা করি তার পদাংক অনুসরণ করে অন্যরাও এ কাজটি বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশকে কেউ চিনত না কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সবাই চিনতো। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে মনে রাখার জন্য, তার চেতনা, আদর্শকে যারা হৃদয়ে ধারণ করেন, তাঁরাই বঙ্গবন্ধু কর্নারের মতো আরও নতুন ও অনন্য উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন।
অনুষ্ঠানে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক কাশেম হুমায়ুন তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক ইতিহাস এবং বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে আমরা তিনটি অংশ দেখতে পাই। একটি ১৯৪৭ এর আগে ব্রিটিশ আমল এবং অন্যটি ১৯৪৭ এর পরে এবং বাকিটি স্বাধীনতা পরবর্তী। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, ৬৮-৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামেই বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল। এ রকম একজন মহান নেতাকে সম্মান দেখিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এই উদ্যোগের তিনি প্রশংসা করেন এবং বলেন যে সরকারও সেটাকে মডেল হিসেবে নিয়েছে।
একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি অসিম সাহা গ্রন্থটি সম্পর্কে বলেন, বইটি যখন হাতে পেলাম, তখন এক চমৎকার অনুভূতি ভেতরে ভেতরে কাজ করতে লাগলো। এমন একটি নান্দনিক ও সৃজনশীল গ্রন্থ অগ্রণী ব্যাংকের মতো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করতে পারে আমি তা ভাবতেও পারিনি। বইটি হাতে নিয়ে, এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে খুব গৌরববোধ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখ্ত বলেন, আমি শুরু করব একটা প্রশ্ন দিয়ে। কেন বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং এটাকে নান্দনিক বলা যায় কিনা? প্রথম কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে জানা এবং বুঝার আমাদের এখনও অনেক বাকি। তাই তাকে জানা এবং তাকে আরও ভালো করে বোঝার জন্য দরকার তার আত্মজীবনী, তার কর্মজীবন পাঠ করা এবং সেজন্য দরকার বঙ্গবন্ধু কর্নারের। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, বাঙালি বড় মনভোলা। খুব সহজেই আমরা ভুলে যাই। সুতরাং আমাদের যেটা দরকার সেই আত্মপ্রত্যয়ী দীপ্তিটা সমুজ্জল রাখা এবং সেটার জন্যই বঙ্গবন্ধু চর্চাটা করা, সেটার জন্যই বঙ্গবন্ধু কর্নার। তৃতীয় কারণ হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তিনি বলেন অবশ্যই বঙ্গবন্ধু কর্নার একটি নন্দিত উদ্ভাবন এবং সেজন্য আমি আশা করব এই আইডিয়া, এই কনসেপ্ট দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক এবং সবাই বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ে উদ্বুদ্ধ হোক, অনুপ্রাণিত হোক।
বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্ভাবক অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু কর্নারের ধারনাটি ছোট একটি ধারনা থেকে এসেছে। পাকিস্তানের হাবিব ব্যাংককে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু নাম দিলেন অগ্রণী ব্যাংক। সেই অগ্রণী ব্যাংকে আমি যখন জেনারেল ম্যানেজার হলাম তখন আমার ধারনা হলো, হাবিব ব্যাংক থাকলে তো সর্বোচ্চ এজিএম হতে পারতাম। এই যে জিএম হলাম কার জন্য? এই দেশটা হয়েছে কার জন্য? দেশটা হয়েছে জাতির জনকের জন্য। এজন্য তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানানো দরকার। ভাবছি কিভাবে জানাবো। তখনই আইডিয়া এলো, যদি কোনো একটি জায়গায় বসে বঙ্গবন্ধুর চর্চা করা যায়-এই আইডিয়া থেকেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু কর্নার।
অগ্রণী ব্যাংকের সপ্তম তলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কর্নার এমন একটি জায়গা, যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন বই, ছবিসহ নানা জিনিস রয়েছে। এখানে একজন মানুষ বা দর্শনার্থী কিছু সময় কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বই পড়ে তার জীবন, ব্যক্তিত্ব, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দর্শন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু পরস্পর অবিচ্ছেদ্য দুটি শব্দ। তাই এখানে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও নানা তথ্য ভান্ডার সংরক্ষিত আছে।
মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম এর উদ্ভাবিত বঙ্গবন্ধু কর্নার ধারনাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর অন্যান্য নেতা কর্মীদের সাথেও বঙ্গবন্ধু কর্নার কনসেপ্টটি শেয়ার করেছেন। এছাড়াও দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ যথা-বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর বতর্মান চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত সহ অনেক রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু কর্নার এর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে।
প্রতিবেদক- মোহাম্মদ শাকির হোসেন খান, পিও
সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক এই নন্দিত উদ্ভাবন
We are proud for this invention.