ই-অগ্রণী দর্পণ

অগ্রণী ব্যাংকের নিজস্ব প্রকাশনা

অগ্রণী ব্যাংকের ১৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ১৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ মে ২০২৩ অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালেয়ের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত এ সভার সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত। সভায় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মন্ডল। সভায় পরিচলনা পর্ষদের পরিচালক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য খোকন এনডিসি, মফিজ উদ্দীন আহমেদ, কাশেম হুমায়ূন, কেএমএন মঞ্জুরুল হক লাবলু, খোন্দকার ফজলে রশিদ, তানজিনা ইসমাইল, মো. শাহাদাৎ হোসেন, এফসিএ এবং মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. মুরশেদুল কবীর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক এবং নির্বাহী পরিচালক মো. জাকির হোসেন চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, শ্যামল কৃষ্ণ সাহা ও রেজিনা পারভীন, মহাব্যবস্থাপকবৃন্দ ও নিরীক্ষা ফার্মের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২০২২ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত ২০২২ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। তিনি ব্যাংকের সকল ব্যবসায়িক ও আর্থিক সূচকে অগ্রগতি ও সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মন্ডল তার বক্তব্যে অগ্রণী ব্যাংকের সকল ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামীতে ব্যাংকটি সকল আর্থিক সূচকে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করে নিতে পারবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. মুরশেদুল কবীর ২০২২ সালে ব্যাংকের সাফল্যগাথা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও আর্থিক সূচক সমূহের অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন। ব্যাংকের আমানত, ঋণ ও অগ্রীম, পরিচালন মুনাফা, আমদানি রপ্তানি, রেমিটেন্স, শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়সহ বিভিন্ন সেবা খাতে ব্যাংকের ভূমিকা উল্লেখ করে সমাজ তথা জাতীয় অর্থনীতিতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের অবদান ও সাফল্যের বিশদ বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালে ব্যাংকের ঋণ এবং অগ্রিম ২০২১ সালের ৫৯,৭৯০ কোটি টাকা থেকে ৭২,৯৩৮ কোটি টাকায় উন্নিত হয়েছে, যা ১৩,১৪৮ কোটি টাকা বা ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ৭৮.৩৬% যা ২০২১ এর ৫৯.২৮% কে ছাড়িয়ে গেছে। চিত্তাকর্ষকভাবে ২০২২ সালে ব্যাংক ১,২০২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায ৮৫% বেশি। ২০২২ সালে নীট সুদ আয়ে অগ্রণী ব্যাংক অসাধারণ উন্নতি করেছে। ২০২২ সালে নীট সুদ আয় উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরে ছিল ঋনাত্নক ৭৬২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ১৫৭%। সামগ্রিকভাবে, ২০২২ সালে ব্যাংকের সুদ উপার্জনক্ষম সম্পদ ৭৭,৭৫০ কোটি টাকা যা ২০২১ সালে ছিল ৬৬,৩৫১ কোটি টাকা প্রবৃদ্ধির হার ১৭%।

অন্যান্য বছরের ন্যায় ২০২২ সালেও রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনে শীর্ষস্থান বজায় রেখেছে। অগ্রণী ব্যাংক ২০২২ সালে ১৩,২৪৭ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করেছে, যা রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা প্রদান এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ২০২১ পর্যন্ত বিভিন্ন deferral সুবিধা বলবৎ থাকায় ২০২১ সালে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কম ছিল। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠার পূর্বেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দা অবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা অবস্থা, ঋণ পোর্টফোলিও এর পুনঃ তফসিলকৃত ঋণগুলোর কিস্তি গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারনে তা পুনরায় মন্দ ঋণে প্রত্যার্পণ ইত্যাদি কারণে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ প্রত্যাশিত সীমায় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তথাপি, ব্যাংক ২০২২ সালে শ্রেনীকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান প্রদর্শন করেছে। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ২০২২ সালে শ্রেনীকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে নগদ ৩৫৭ কোটি সহ মোট ১,১০৯ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বেশী। অগ্রণী ব্যাংক সিএমএসএমই শিল্পের উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহনের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করে। ২০২২ সালে সিএমএসএমই শিল্পের উন্নয়নে ২,০৫৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দক্ষ জনবল নিয়ে সর্ব ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সর্বোত্তম সেবা দিয়ে দেশ তথা জাতির উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এ ব্যাংকটি নানা সাফল্যেও সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলেছে- ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও তাঁর বক্তব্যে তা তুলে ধরেন। সে সাথে ২০২৩ সালে ব্যাংকটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে ব্যাংকের সকল ব্যবসায়িক কর্মকান্ড এবং আর্থিক সূচক সমূহের অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, অধিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম অর্জন ও সর্বক্ষেত্রে অগ্রণীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

কপিরাইট © অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃক সংরক্ষিত | Newsphere by AF themes.